"এই গল্পটা তোমার জন্য ছিল।"

একটা শহর ছিল, নাম তার ছিল না। না মানচিত্রে, না স্মৃতিতে, না কোনো লেখায়। কেউ তার জন্মদিন জানত না, কেউ জানত না কখন সে নিঃশব্দে নিঃশেষ হয়ে যাবে।
এই শহরে একমাত্র বাসিন্দা ছিল এক বৃদ্ধ, নাম তার — তালিমুদ্দিন। একদিন হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে সে দেখল, শহরের সব রাস্তা পাল্টে গেছে। ঘরগুলোর দরজা উল্টো দিকে, জানালা নেই, দেয়াল গায়েব। সে বোঝে না, এটা স্বপ্ন, না বাস্তব। কিন্তু বাস্তব বলেই ধরে নেয়, কারণ স্বপ্নে সে এত নিঃসঙ্গ ছিল না।
তালিমুদ্দিন প্রতিদিন সকালবেলা বের হয়, হাতে একটা খাতা আর একটা কালো পেন। সে লেখে, কিন্তু যেই লেখা শেষ করে, শব্দগুলো হারিয়ে যায় পাতার ওপর থেকে। শুধু একটাই বাক্য রয়ে যায় প্রতিদিন:
“এই শহরটা আমার না, কিন্তু আমিই একমাত্র যার কাছে এর গল্প আছে।”
একদিন তার সামনে দাঁড়ায় একটা বাচ্চা মেয়ে — কারও জানাশোনার নয়, নামহীন, অস্তিত্বহীন — ঠিক এই শহরের মতো। সে বলে,
— "তুমি কি লেখতে পারো একটা এমন গল্প, যেটা কেউ কোনোদিন লেখেনি?"
তালিমুদ্দিন মাথা নেড়ে বলে,
— "আমি লিখছি প্রতিদিন, কিন্তু কাগজ রাখে না সেই স্মৃতি। তুমি থাকলে কি সেই গল্প থাকবে?"
মেয়েটি হাসে। তার চোখে ছিল একরাশ শূন্যতা আর একফোঁটা আশা। সে বলে,
— "গল্প যদি হারায়, লেখক কি সত্যিই হারায়?"
সেদিনই শহরের আকাশে প্রথমবার বৃষ্টি নামে। শব্দহীন বৃষ্টি। তালিমুদ্দিন তার খাতায় লেখে:
“একটা গল্প, যেটা লেখা হয়নি, কারণ লেখার আগেই সে হয়ে উঠেছে সত্যি।”
সেই দিন থেকে কেউ আর তাকে খুঁজে পায়নি।
কেউ শহরটাও খুঁজে পায়নি।
শুধু কেউ কেউ স্বপ্নে দেখে —
একটা খাতা ভাসছে অদৃশ্য জলে।
পাতাগুলো ফাঁকা নয়।
শুধু লেখা এক লাইনে:
"এই গল্পটা তোমার জন্য ছিল।"
Leave a Comment