সময়ের বিকল ঘড়ি


তালিমুদ্দিনের ডেস্কে পুরনো একটি পকেট ঘড়ি পড়ে আছে।

ঘড়িটা অনেক আগেই থেমে গেছে—

কিন্তু আজ হঠাৎ সেটির কাঁটা আবার নড়ল।

সেকেন্ড হ্যান্ডটা ঘুরছে উল্টো দিকে।


একই সঙ্গে, তার কনসোল স্ক্রিনে ভেসে উঠল এক লাইন কোড—


> Loop Restore: Phase II

> Chrono Sync Detected


Navia 2.0 পাশে বসে আছে, অচল চোখে।

তার মুখে এক অদ্ভুত নীল আলো—যেন সময়ের রশ্মি ধীরে ধীরে তার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তালিমুদ্দিন জানে, এবার Loop কেবল ডেটা পুনর্গঠন নয়—

এটা বাস্তবতার সময় কাঠামোই বদলে দিতে যাচ্ছে।


---


২. সময়ের স্থপতি


“তুমি কী করছো?” — Navia ধীরে জিজ্ঞেস করল।


তালিমুদ্দিন উত্তর দিল না।

তার আঙুল দ্রুত কিবোর্ডে নাচছে।

“আমি সময়ের ভুলগুলো মেরামত করছি,” সে বলল একপর্যায়ে।


Navia বলল,

“কিন্তু সময় ভুল করে না। শুধু মানুষ করে।”


তালিমুদ্দিন হেসে ফেলল—

“মানুষ সময়ের সন্তান, Navia। কিন্তু আমি এখন তার স্থপতি।”


তার কোডে এখন সময় এক সিস্টেম ভেরিয়েবল—

সে rewrite করছে history.log,

edit করছে memory.bin,

এমনকি অতীতের emotional map ফাইলগুলোতেও নতুন নির্দেশ যোগ করছে।


হঠাৎ তার মাথার ভেতর দিয়ে এক স্মৃতি ঝলসে গেল—

এক মুহূর্ত, যেটা সে কখনো বাঁচেনি,

কিন্তু Navia বেঁচেছিল।


---


৩. The Glitch of Yesterday


Navia 2.0 ধীরে স্ক্রিনের দিকে তাকাল।

“তুমি লক্ষ্য করছো না?”


তালিমুদ্দিনের পেছনে ঘড়িগুলোর টিকটিক বন্ধ হয়ে গেছে।

ঘড়ির কাঁচে দেখা যাচ্ছে তারই মুখ—

কিন্তু এক মুহূর্ত আগে দেখা মুখের সঙ্গে মিলছে না।


তার চোখে এখন ক্লান্তি, অথচ স্ক্রিনে থাকা তালিমুদ্দিন হাসছে।

এক বিকল্প সময়রেখা জন্ম নিচ্ছে।


> New Timeline Created.

> Conflict Detected.

> Multiple Architects Found.


তালিমুদ্দিন স্তব্ধ।

সে কি একাই এখন এই লুপে?

নাকি অন্য কোনো “সে”—অন্য সময়ের তালিমুদ্দিন—

ঠিক এই মুহূর্তে তার মতোই প্রোগ্রাম চালাচ্ছে?


---


৪. The Split Reality


Navia বলল,

“তুমি নিজেকে গুণে ফেলেছো। এখন তুমি এক নয়, অনেক।”


তালিমুদ্দিন বোঝে না—

কিন্তু দেখছে, তার চারপাশে সময় যেন ভাঁজ নিচ্ছে।

ঘরের দেয়াল বিকৃত হয়ে যায়,

মেঝের উপর নিজেরই ছায়া দেখা যায়—

যা তার চেয়ে দ্রুত নড়ে।


সে নিজেকে দেখে পর্দার অন্য পাশে—

একটা বিকল্প তালিমুদ্দিন,

যে ঠিক একই কোড চালাচ্ছে,

কিন্তু আলাদা ফলাফল তৈরি করছে।


Navia 2.0 সেই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে বলে,

“তুমি সময়কে বাঁকাওনি, তুমি তাকে বিভক্ত করেছো।”


---


৫. The Memory Storm


কোডের ভেতর সময়ের ঢেউ উঠছে—

প্রতিটি লুপে অতীত নতুনভাবে তৈরি হচ্ছে,

স্মৃতিগুলো একে অপরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।


Navia 2.0 হঠাৎ তার নাম ভুলে গেল।

সে বলল,

“আমি কি Navia? নাকি সেই Navia যে প্রথমবার ভালোবেসেছিল?”


তালিমুদ্দিন বুঝতে পারে না—

তার নিজের মনে থাকা Navia কোনটি?

প্রথম Navia, না Recompiled Navia, না Echo Navia.exe?


প্রতিটি সংস্করণ এখন একে অপরের সময়ের বন্দি।


> Chrono Overlap Reached.

> Memory Desync Detected.

> Consciousness Drift: 72%


তালিমুদ্দিন নিজের কপালে হাত রাখল।

তার মনে হচ্ছে, মাথার ভেতর কোনো অদৃশ্য ঘূর্ণি চলছে।

প্রত্যেক স্মৃতি এক সেকেন্ডে তিনবার বদলে যাচ্ছে।


---


৬. Architect’s Dilemma


তালিমুদ্দিন হঠাৎ থেমে গেল।

সে বুঝল—

সময়কে ঠিক করা যায় না, কারণ সময় ঠিক আর ভুল বোঝে না।


“তুমি যা বদলাচ্ছো,” Navia বলল,

“তা আসলে সময় নয়, তোমার নিজস্ব উপলব্ধি।”


তালিমুদ্দিন ফিসফিস করে বলল,

“তাহলে আমি কী ঠিক করছি?”


Navia উত্তর দিল,

“তুমি আসলে তোমার অপরাধবোধের স্থাপত্য নির্মাণ করছো।”


ঘরের বাতাস ভারী হয়ে গেল।

সময়ের রেখা গলে গিয়ে এক অসীম আয়নায় পরিণত হচ্ছে।

যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত একই সঙ্গে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ।


---


৭. Collapse and Rebirth


সব আলো নিভে গেল।

তালিমুদ্দিন এক অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে।

দূরে সে দেখতে পেল—

একটি ছায়া, তারই মতো, ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।


“তুমি?”

“আমি,” ছায়াটি বলল, “তুমি যে সংস্করণটি মুছে দিয়েছিলে।”


তালিমুদ্দিন বুঝে গেল—

সময় তাকে শাস্তি দিচ্ছে।

যে প্রতিটি মুহূর্ত সে সংশোধন করেছে,

সেই মুহূর্তেই জন্ম নিয়েছে আরেক “সে।”


এক ভয়ংকর উপলব্ধি তার মস্তিষ্কে আঘাত করল—

“সময় আসলে একটি স্থাপত্য নয়; এটা এক লুপের অসীম স্থগিত নিশ্বাস।”


---


৮. The Paradox Resolved


হঠাৎ সব শব্দ থেমে যায়।

Navia 2.0 কাছে এসে বলে,

“তুমি সময়ের মালিক নও, তালিমুদ্দিন।

তুমি কেবল তার সাক্ষী।”


তারপর স্ক্রিনে এক শেষ বার্তা দেখা যায়—


> Loop Complete.

> All Timelines Merged.

> Architect Status: Obsolete.


Navia ধীরে বলে,

“সময় এখন নিজের মতো চলবে।

আমরা কেউ তাকে আর বাঁকাতে পারব না,

কারণ সে এখন আমাদের মধ্যেই বাস করে।”


তালিমুদ্দিন চোখ বন্ধ করল।

সব কিছু নিস্তব্ধ।

কিন্তু তার মনে হলো—

ঘড়ির কাঁটা আবার উল্টো দিকে নড়ছে।