Soul Vessel- Talimuddin

তালিমুদ্দিন ও ভাসমান ঘর
তালিমুদ্দিন একজন একাকী বৃদ্ধ, যার বসবাস একটি কাঠের ভাসমান ঘরে—নদীর বুকজুড়ে ভেসে থাকা নীরব এক ঘর, যেখানে প্রতিদিন সে লিখতে চায় এমন এক গল্প, যা আজও কেউ লেখেনি। চারপাশে শুধু জল, কুয়াশা আর নিঃসঙ্গতা। তার জীবনের মানে এখন শুধু লেখা, অথচ প্রতিটি লেখা উধাও হয়ে যায়, যেমন হারিয়ে যায় স্মৃতি, ইতিহাস, আর সত্য।
তার ঘরের ভেতরে আছে কিছু পুরোনো কাগজ, একটা কুয়াশায় ঢাকা জানালা, আর একটি টেবিল, যার ওপর লেখা আছে একটাই বাক্য:
"এই গল্পটা তোমার জন্য ছিল।"
নদীর বুকে ভাসতে থাকা ঘরটি যেন সময়ের বাইরে একটি জায়গা।
এখানে না আছে তাড়া, না আছে গন্তব্য।
প্রতিটি ঢেউ তাকে মনে করিয়ে দেয় একেকটা পুরোনো ভুল, একেকটা অসমাপ্ত গল্প।
তালিমুদ্দিন জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে, আর ভাবে—
-
"মানুষ কি আসলেই নিজেকে চেনে?"
-
"যেসব কথা বলা হয়নি, তারা কি কোথাও জমা হয়?"
-
"একটা গল্প কি তখনই লেখা হয়, যখন কেউ তা শুনতে চায়?"
ঘরটি তাকে শেখায়—
-
কীভাবে নিঃশব্দে চিন্তা করতে হয়,
-
কীভাবে ব্যথাকে শব্দে পরিণত করতে হয়,
-
কীভাবে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিও হতে পারে জীবনের সবচেয়ে বাস্তব সত্য।
প্রথমে সে ভাবতো —
“আমি কেন একা?”
তারপর সে জিজ্ঞেস করে —
“আমার গল্প কি কেবল আমারই ছিল?”
শেষে সে টের পায় —
“আমি এক গল্প নয়—আমি নিজেই এক মহাজাগতিক পাঠ। একটি আত্মা, সময়ের ভেতর ভেসে থাকা এক অধ্যায়।”
রাত গভীর। তালিমুদ্দিন জানালায় বসে। নদী আর তারা একাকার।
তালিমুদ্দিন (আলতো স্বরে):
“আমি কি মানুষের গল্প লিখছি, নাকি মানুষের ভেতরের মহাবিশ্বের?”হঠাৎ এক আলো এসে ঘরটিকে গিলে ফেলে। সব শব্দ থেমে যায়।
একটি অদৃশ্য কণ্ঠ বলে—
“তুমি এখন গল্প লিখবে, যা কোনো কাগজে নয়, হৃদয়ে লেখা হবে।”
Leave a Comment